অভাবের মাঝেই কেটেছে তার শৈশব। স্কুললাইফ থেকে শুরু অভাবকে জয় করার যুদ্ধ। শৈশবে অন্যরা যখন খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত এই ছেলেটি তখন ঘুরে ঘুরে ছোলা-মুড়ি বিক্রি করছেন। বলছি ভাঙা ঘরে থেকে আলোকিত হওয়া জাহিদুলের গল্প। শত অভাবের মাঝে স্বপ্নকে জয় করেছেন জাহিদুল। হয়েছেন বিসিএস ক্যাডার। তিনি এখন কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারি পরিচালক।
জাহিদুলের বাবা ট্রেনে ঘুরে ঘুরে এটা-ওটা বিক্রি করতেন। আর মা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে জমি চাষ করতেন। বড় ভাই তার চাচার দোকানে কাজ করতেন। সেখান থেকে প্রতি ঈদে প্রিন্টের কাপড়ের জামা বানিয়ে দিতেন। ওটাই জাহিদুলের সারা বছরের পোশাক। বিদ্যালয়ের বন্ধুরা যখন উৎসবমুখর হয়ে শিক্ষাসফরে গিয়েছে কিংবা ঈদের ছুটিতে হইহল্লায় মেতেছে, জাহিদুল তখন বাজারে ছোলা মুড়ি বিক্রি করেছেন।
কখনো–বা রাত জেগে ভাইয়ের দোকানে কাজ করেছেন। এভাবে অভাবের মাঝে থেকেও এসএসসি পরীক্ষায় তাক লাগানো সাফল্য দেখিয়েছিলেন জাহিদুল। সেরা ফল করে ভর্তি হলেন রাজবাড়ী সরকারি কলেজে। বড় ভাই চাল
দিয়ে যেতেন। সেটাতেই মাস পার করতে হতো। ২০০৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করলেন। কোচিং করা তো দূরের কথা, একটা বই কেনার সামর্থ্যও ছিল না। তাও তিনি ধার করা বইয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর পাংশা কলেজে স্নাতক পাস কোর্সে ভর্তি হয়ে টিউশনি শুরু করলেন। পরের বছর সেই টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন।
চান্স পেলেন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে। আবারও দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়লেন। পড়াশোনার খরচ আসবে কোথা থেকে। শিক্ষাঋণ নিলেন একটি ব্যাংক থেকে। টিউশনিও শুরু করলেন। জীবন পাল্টে যেতে লাগল। স্বপ্নটাও বড় হতে লাগলো। বিবিএ ও এমবিএতে প্রথম বিভাগে পাস করলেন। পড়াশোনা শেষ এবার অনিশ্চয়তা চাকরি নিয়ে। এরই মাঝে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। জাহিদুল স্মৃতিচারণ করেন, হাঁটতে পারেন না, পকেটে টাকা নেই কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। ঢাকায় গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেবেন।
কোথায় থাকবেন এসব নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তিনি। এত অনিশ্চয়তার মাঝেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তিনি। টার্গেট চিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। হয়েও গেলেন। ৩৪তম বিসিএসে কৃষি বিপণন ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পাল্টে গেল তার জীবন। তিনি এখন কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারি পরিচালক।