আঠারো বছর বয়স নাকি অনেক দুঃসহ। এই কথাটি বলে গেছেন সুকান্ত সাহেব। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এখন পঁচিশ বছর বয়স খুব দুঃসহ হয়ে উঠেছে। কেন আমার কাছে মনে হচ্ছে সেটা সবিনয়ে নিবেদন করছি একটু অপেক্ষা করুন।
পঁচিশ বছর বয়সের পর ছেলেদের মধ্যে পুরুষ পুরুষ একটা ভাব আসতে শুরু করে। যাকে সোজা বাংলায় বলা যায় পরিপক্বতা। বাঙ্গালীর শরীরবৃত্তীয় কারণে মনে হয় পৌরুষ ভাব আসে একটু দেরিতে।
অন্যদিকে বাঙ্গালী মেয়েদের শুরু হয় আরেক জ্বালা । পঁচিশের পরে কেন জানি তাদের চেহারার লালিত্য কমতে থাকে। কুড়িতেই বুড়ি হয়তো এখন কেউ হয়না ,সেটা এখন পাঁচ বছর বেড়ে পঁচিশে বুড়ি(হওয়া শুরু হয়) তে রূপান্তর হয়েছে। পঁচিশের পরে তাদের চেহারায় বয়সের ছাপ পড়া শুরু হয়। ছেলেরা দিনকে দিন পৌরুষ হয়ে উঠলেও মেয়েরা দিনকে দিন বৃদ্ধ হতে থাকে। বয়ঃসন্ধি কাল থেকেই মেয়েদের চেহারায় লালিত্য বাড়তে থাকে আর কমতে থাকে পঁচিশের থেকে। ফলে একটা অমোঘ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ষোলতে আমাদের দেশে ম্যাট্রিক পরিক্ষা দিই আমরা। আর স্বাভাবিক ভাবেই মাস্টার্স শেষে আমাদের বয়স হয়ে যায় ২৪। চাকুরি পেতে পেতে প্রায় তিরিশ। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় তেমন একটা সমস্যা হয়না, কিন্তু পঁচিশে বুড়ি হতে থাকা মেয়েদের শুরু হয় সমস্যা।
তারা না পারে চাকুরি শুরু করতে না পারে বিয়ে করতে। অনেক মেয়ের আজীবনের লালিত স্বপ্ন থাকে প্রথম শ্রেণির বা দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরি করা। বিসিএস বা চাকুরির পড়া শুরু হয় ২৪ এর পর থেকে। ফলে তাদের পড়তে হয়, শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায়। ইন্টার পাশ করার পর ভাল জায়গায় চ্যান্স পেয়েছে এই ঘোরে অনেক মেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করেনা।
একের পর এক বিয়ের প্রস্তাবকে পায়ের তলায় পিষে ফেলে এগিয়ে চলে স্বপ্নের অবাস্তব জগতে। আমি অমুক জায়গায় পড়ি তমুক বড়বড় অফিসারেরা আমার জন্য পাজেরো নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে টাইপের একটা চিন্তা তাদের পেয়ে বসে। কিন্তু মাস্টার্স শেষ হলে তাদের রথের চাকা মাটি ছোঁয়। তারা দেখে যে তাদের জন্য আর আগের মত প্রার্থী আসছেনা বা যারা আসছে তাদের সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তাদের মিলছেনা।
এছাড়া বেশিভাগেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেম করে ছ্যাঁঁকা খায় ততদিনে। লালিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিন গুলো যে প্রেমিকের সাথে কাটিয়েছে সে একটা সময় উল্টা পাল তুলে নৌকা বায়। ফলে একটা সময় “ব্রোকেন ব্রিজ থেওরি”র মত মেয়েদের ছুটে যেতে হয় একটা ভাল চাকুরীর দিকে। সেই ভাল চাকুরি যা পেতে হলে ব্যয় করতে হবে যৌবনের আরো ৩/৪ টি সোনালী বছর।কিন্তু তার প্রত্যেকটা দিন যে এখন অনেক দামি! আগে অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দেওয়াতে পরিবারেরও এমন একটা ধারণা তৈরি হয় যে সে নিজের মত করে তার সামনের জীবন গুছিয়ে নিবে বা পরিবার রিজেক্ট শুনতে শুনতে হয়ে পড়ে ক্লান্ত। ফলে মেয়েটির নিয়তি হয়ে দাঁড়ায় “ভাল চাকুরি তথা বিসিএস”।
এছাড়া কালো , খাট, ফেইসকাটিং ভাল না টাইপের সমস্যা থাকলে তো ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে দাঁড়ায়।
যারা চাকুরি নামক হীরের টুকরার সন্ধান পায় তারা বিগতলালিত্য নিয়েও মোটামুটি তাদের যোগ্যতার সমান ছেলে পায় কিন্তু যারা চাকুরি নামের সোনার টুকরা পায়না তাদের ক্ষেত্রে?? চাকুরিহীন অবস্থায় কোন মেয়ের বয়স যেদিন ৩০ ক্রস করে সেদিনের তাঁর অনুভূতি কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? কি অস্বাভাবিক এক অনুভূতির ভিতর দিয়ে তাকে যেতে হয়!!
সমাজ, আত্মীয়, বন্ধু বান্ধবের সামনে সে দাঁড়িয়ে থাকে রিক্ত হস্তে। তাঁর পিছনে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই । হয়তো অনেক বার প্রেম-বিরহ করতে করতে তাঁর মন আর আগের মত আবেগীয়ও থাকেনা। সে বসবাস করতে থাকে এক অমোঘ সত্যের জগতে। আর যে জগতে একমাত্র সত্য হয়ে তাঁর সামনে হাজির হয় একটা লাইন, ” সে ভাল জায়গায় পড়েও চাকুরি পায়নি এবং তাঁর বয়স বেশি” সে এখন যুদ্ধ থেকে পরাজিত হয়ে বিধ্বস্ত হয়ে ফিরে আসা এক সৈনিক।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানির বেশিরভাগ ছেলেরাই চলে গিয়েছিলো যুদ্ধে। মেয়েদের ঘর থেকে বের হয়ে ধরতে হয়েছিলো দেশ চালানোর যন্ত্র। সব কাজে শুধু মেয়ে আর মেয়ে। এদিকে যুদ্ধ শেষে ছেলেরা এসে দেখে তারা বেকার। আর অন্যদিকে মেয়েরা স্বাবলম্বী কিন্তু তাদের যোগ্য জামাই নেই । শুরু হল অচলবস্থা। এই অবস্থা কাটালেন আমাদের হিটলার সাহেব। তিনি অবিবাহিত ছেলে আর মেয়েদের প্যারেডের আয়োজন করে তাদের পরস্পরের কাছে আসতে সুযোগ দিলেন। দেশ থেকে দূর হল বয়স্ক অবিবাহিত ছেলে মেয়ের দল। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশে এমন জটিলতার সৃষ্টি হয় কিনা আল্লাহ্ মালুম!
তাই সময় থাকতে সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের শিক্ষিত মেয়ে গুলো তসলিমা নাসরিনের মত তথাকথিত প্রগতিশীল(!) হয়ে গেলে খুব একটা সমস্যা হতনা। কিন্তু যেহেতু তাঁরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে সন্তানের মা ও হতে চায়,নিজের একটি সংসার চায়, নিজের একজন একান্ত মানুষের বাহুডোরে বাঁধা থাকতে চায়, নিজের একান্ত পুরুষটিকে সুন্দর চেহারায় চায় তাহলে অনার্সে পড়া অবস্থাতেই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে।
যেহেতু তাদের ভিতরে একটা বাঙ্গালীর মেয়ে লুকিয়ে আছে সেহেতু তাকে বাঁচিয়ে রাখার বুদ্ধিটাও তাকেই করতে হবে। যেহেতু তাদের মনের গভীরে লুকিয়ে আছে “কোন এক বিছানায় গভীর রাতে একটা বড় পুরুষ হাত তাঁর কন্ঠ জড়িয়ে থাকবে আর একটা ছোট হাত তাঁর বুকে আসবে” এই স্বপ্ন , তাহলে সেটার জন্যও একটা বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা থাকতে হবে।