আমাদের ৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটিকে ব্যাকরণের জন্য বাইবেল হিসেবে চিন্তা করে অনেকে। বইটি নিঃসন্দেহে ব্যাকরণের প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্য অনন্য। তবে বইটিতে পরিপূর্ণ সংস্করণের অভাবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মুদ্রণজনিত কিছু ভুল আছে যা সহই প্রতিবছর তা প্রকাশিত হচ্ছে।
আর বাজারের কিছু প্রচলিত বই ৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বইকে গবেষণা ছাড়াই অনুসরণ করে সঠিক তথ্য যাচাই না করে বই প্রকাশ করে বিধায় ঐ বইগুলোতেও একই তথ্য থাকে৷ আমাদের এগুলো সম্পর্কে জানা উচিত। তাই আজ প্রচলিত কিছু ভুল নিয়ে আলোচনা করব।
৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের মুদ্রণজনিত ভুল পর্ব-১
পৃ. ২৯ পয়েন্ট ১৬ = র-কার লোপ এর উদাহরণ দেওয়া আছে তর্ক > তক্ক যা হায়াৎ মামুদ স্যারের ভাষা শিক্ষা বইয়ে দেওয়া আছে পরাগত সমীভবনের উদাহরণে এবং ব্যাখ্যানুসারে এটা পরাগত সমীভবনই সঠিক।
পৃ. ৩৮ পয়েন্ট ১৪ = অন্য + অন্য = অন্যান্য। এটা নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধিতে দেওয়া আছে। কিন্তু একটু চিন্তা করেন তো সন্ধিতে অ + অ = আ হলে ‘অন্যান্য’ তো নিপাতনে সিদ্ধ হওয়ার কথা না। এখানেই প্রিন্টিং এর ভুল। আসলে ঐ শব্দটা হবে ‘অন্যোন্য’। অর্থাৎ অ + অ মিলে ‘আ’ হওয়ার কথা থাকলেও ‘ও’ হয়েছে।
পৃ. ৪৯ = দ্বিরুক্ত শব্দের প্রকারের মধ্যে যে উদাহরণগুলো আছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ‘শব্দের দ্বিরুক্তি’ হচ্ছে সেগুলো যাতে বিভক্তি যুক্ত থাকে না। যেমন : বড় বড় গাছ, ভালো ভালো বই, কবি কবি ভাব ইত্যাদি। আর ‘পদের দ্বিরুক্তি’ হচ্ছে সেগুলো যাতে বিভক্তি যুক্ত থাকে। যেমন : গাছে গাছে ফুল ফুটেছে, ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা ইত্যাদি।
সমস্যা হচ্ছে দ্বিরুক্ত শব্দের এই প্রকারভেদের নিচে ‘পদের দ্বিরুক্তির প্রয়োগ’ নামে একটি শিরোনাম দেওয়া আছে। কিন্তু এই শিরোনামের আওতায় যে উদাহরণগুলো দেওয়া তার অনেকগুলোতেই বিভক্তি যুক্ত নেই। যেমন : রাশি রাশি ধন, আমি জ্বর জ্বর বোধ করছি, ও দাদা দাদা বলে কাঁদছে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কি পদের দ্বিরুক্তি না? উত্তর : না। এগুলো শব্দের দিরুক্তি। অর্থাৎ শিরোনামে ভুল আছে। এটা ‘পদের দ্বিরুক্তির প্রয়োগ’ হবে না। হবে ‘পদে দ্বিরুক্তির প্রয়োগ’।
পৃ. ৫৭ = ‘বহুবচনের প্রয়োগ বৈশিষ্ট্য’ শিরোনামের অধীনে ‘গ’ নং পয়েন্টে লেখা আছে – অনেকসময় বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগেও বহুবচন সাধিত হয়। যেমন : হাড়ি হাড়ি সন্দেশ। লাল লাল ফুল। বড় বড় মাঠ ইত্যাদি।
অনেক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন আসতে দেখা যায় –
প্রশ্ন : ‘লাল লাল ফুল’ – এখানে বহুবচন হয়েছে কোন কোন পদের সমন্বয়ে? A. বিশেষ্য ও বিশেষণ B. বিশষ্য ও বিশেষ্য C. বিশেষণ ও বিশেষণ D. বিশেষণ ও বিশেষণ ।
এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই অপশন A দাগায়। কারণ ৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বইতে হুবহু উল্লেখ আছে অনেকসময় বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগেও বহুবচন সাধিত হয়। কিন্তু এখানে সঠিক উত্তর হবে C. লক্ষ্য করুন ‘লাল’ পদটি বিশেষণ আর লাল পদের দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়ে প্রশ্নোক্ত বাক্যে বহুবচন হয়েছে অর্থাৎ অপশন C.
আরাও পড়ুনঃ ব্যাকরণ বইয়ের মুদ্রণজনিত ভুল পর্ব-২ ।[ধারাবাহিকভাবে চলবে। শেয়ার করে সবার মাঝে তথ্যগুলো ছড়িয়ে দিন যেন আমাদের নিজেদের উদ্যোগেই আমাদের পাঠ্যপুস্তকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।]
আর একটা কথা অনেকের ব্যাকরণ বইয়ের সাথে পোস্টে উল্লিখিত পৃষ্ঠা নং না মিলতে পারে। এটা প্রতি বছরের বইয়ের সংস্করণের জন্য হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটু কষ্ট করে ২/১ পৃষ্ঠা আগে / পরে মিলিয়ে নিলেই পয়েন্টগুলো পেয়ে যাবেন।