৪৪ তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি : ফাইজুল করীম আদর

৪৪ তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতি

ফাইজুল করীম আদর
৪০ বিসিএস পুলিশ(সুপারিশপ্রাপ্ত,মেধাক্রম-০১)

অনেক দিন ধরেই লেখার ইচ্ছা ছিল।কিন্তু পেশাগত ব্যস্ততার কারনে লেখার সুযোগ হয়নি।৪৪ বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থীরা অন্যান্য বারের থেকে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কম সময় পাবেন।যারা প্রথমবার লিখিত দিবেন তারা হয়তো আত্মবিশ্বাস রাখতে পারছেন না যে কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন।কিন্তু মনে রাখবেন যারা ক্যাডার হবে তারা এই ৪ মাস পড়েই ক্যাডার হবে।

আজকে আমি মোটা দাগে সবগুলো বিষয়ের কি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো।সামনে বিষয়ভিত্তিক প্রতিটি বিষয় নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ।

ইংরেজিঃ

★আগের বিসিএসগুলোর মার্কসিট দেখে অনেকেই ধারণা করতে পারছেন ক্যাডার আর নন-ক্যাডার এর পার্থক্যটা গড়ে দিবে ইংরেজির নম্বর।ইংরেজিতে নাম্বার তোলার মূল জায়গা হলো পার্ট-এ। অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এখানে যে ভুলটা করে তা হলো প্যাসেজটা না বুঝেই উত্তর শুরু করে দেওয়া।প্যাসেজের মূল ভাব বুঝতে আপনাকে সময় দিয়ে রিডিং পড়তেই হবে।প্যাসেজের Skim Through নলেজ নিয়ে উত্তর করতে গেলে আপনার উত্তর হবে গড়পড়তা এবং আপনাকে বারবার পুরো প্যাসেজ পড়ে উত্তর করতে হবে।সেক্ষেত্রে যে সময়ের অপচয় হবে তার প্রভাব পড়বে পার্ট-বি তে।তাই প্রশ্ন পাওয়ার পর প্যাসেজ ভাল করে পড়ে নিতে হবে যেন ১০ টি প্রশ্নের টু দা পয়েন্ট উত্তর করা যায়।

★পার্ট-এ তে ভাল করার জন্য ভোকাবুলারি এর উপর পারদর্শী হওয়া আবশ্যক।প্রিলিমিনারী পরীক্ষার জন্য অনেকেই হয়তো ভোকাবুলারি স্কিপ করেছেন।কিন্তু এবার তার সুযোগ নেই।ভোকাবুলারির জন্য অনেকে ওয়ার্ড মুখস্থ করেন এই সময়ে।তবে আমি সাজেস্ট করবো এই চারটা মাস নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করুন।ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের নিউজ গুলো বিশ্লেষন করলে দেখবেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা কমন শব্দগুলোই পত্রিকায় সমার্থক শব্দ দিয়ে লেখা হয়। পত্রিকা থেকেই তাই ভোকাবুলারি শিখুন। আর প্রতিটা ওয়ার্ড যখন শিখবেন কষ্ট করে ভোকাবুলারির একটা নোট খাতা বানিয়ে সেখানে সংরক্ষণ করবেন।ওয়ার্ড সরাসরি মুখস্থ না করে নিজের মাথায় ওয়ার্ড দিয়ে সেনটেন্স তৈরি করুন। আশা করি তখন শেখাটা দীর্ঘমেয়াদি হবে।

★ প্রথমেই ৩০ নাম্বারের জন্য ১০ টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।প্রশ্নগুলোর উত্তর করার সময় Grammatical error করা যাবে না।Tense,sentence structure এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।পার্ট-এ এর বাকি অংশ নিয়ে বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে লিখবো।

★পার্ট-বি তে ৫০ মার্কের রচনার জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।মনে রাখবেন ৫০ এ অনেকে ৩৫ পাবে আবার কেউ ২০ ও পাবে।এই মার্ক ডিফারেন্স কিন্তু অন্য সাবজেক্ট দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবেন না।

★বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী B2E ও E2B অনুবাদ চিন্তিত।তবে আগামী চারটা মাস নিয়মিত অনুবাদ চর্চা করলে এই দূর্বলতা থাকবে না।এক্ষেত্রে বই থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অনুবাদ চর্চার জন্য প্রতিদিন ৩০ মিনিট হলেও বরাদ্দ রাখা।

বাংলাঃ

★বাংলা দুই পার্ট মিলিয়ে পড়ার জায়গা বেশি না।মূল ফোকাস দিতে হবে ব্যাকরণের ৩০, বাংলা সাহিত্যের ৩০,গ্রন্থ সমালোচনার ১৫ নম্বরে।বাকি টপিকগুলো আপনারা স্কুল জীবন থেকেই পড়ে আসছেন।শুধু একটু ঝালিয়ে নিতে হবে।

★বাংলা ২য় পত্রে Time management একটা বড় চ্যালেঞ্জ।শেষের দিকে প্রবন্ধ রচনায় অনেক কম সময় পাওয়া যায়,তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

★অনুবাদ, সংবাদপত্রে প্রতিবেদন /চিঠি ও কাল্পনিক সংলাপে একটু গুছিয়ে লিখলেই ভাল নাম্বার পাওয়া সম্ভব।এক্ষেত্রে শুধু নিয়ম গুলো যে কোন বই থেকে দেখে নিবেন।

★ফ্রি হেন্ড রাইটিং এর স্কিল লিখিত পরীক্ষার অন্যতম অস্ত্র।যাদের সমস্যা আছে এই সময়ে স্কিলটা বাড়িয়ে নিবেন।

বাংলাদেশ বিষয়াবলীঃ

★অধিকাংশ পরীক্ষার্থী বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে ভালো প্রিপারেশান থাকা সত্ত্বেও এক্সপেক্টেড মার্ক পান না।এর মূল কারন খাতায় ঠিকভাবে উত্তর উপস্থাপন করতে না পারা।

★মনে রাখবেন এই বিষয়ে কম বেশি সবাই লিখতে পারবে কিন্তু পার্থক্য তৈরি হবে খাতার উপস্থাপনে,প্রাসঙ্গিক ডাটা/চার্ট/কোটেশান ব্যবহারে।

★৫/১০/১৫ নাম্বারের প্রতিটি প্রশ্নের জন্য আপনি কত মিনিট লিখবেন এটা আগে থেকেই ঠিক করে যাবেন।অনেকেই প্রথম দিকের প্রশ্ন গুলো বড় করে লিখতে গিয়ে শেষের দিকে ১০-২০ নাম্বার ছেড়ে দিয়ে আসেন।এই গ্যাপ কোনভাবেই পূরণ সম্ভব না।

★আমি ৪০ বিসিএসে বাংলাদেশ বিষয়াবলী প্রশ্নের উত্তর করতে গিয়ে প্রতিটি প্রশ্নেই আলাদা কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেছি যেন এক্সামিনার অন্য খাতা থেকে আমার খাতার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হন।

★একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করি।আমাদের সময় প্রশ্ন এসেছিল পঞ্চদশ সংশোধনীর মূল বিষয়গুলো নিয়ে। ১০ নাম্বারের এই প্রশ্নের উত্তর করতে গিয়ে আমি তৎকালীন সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির কো চেয়ারম্যান প্রয়াত বর্ষীয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বক্তব্য দিয়ে শুরু করি।
বাকি অংশ কিন্তু সবার আর আমার লেখা একই ছিল।

★এভাবে আমি চেষ্টা করেছি প্রতিটি প্রশ্নেই কোটেশান দিয়ে হোক বা ডাটা দিয়ে হোক লেখার মধ্যে বৈচিত্র্য রাখার।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীঃ

★আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী কনসেপচুয়াল ইস্যু নিয়ে আমাদের কনসেপ্ট একটু চেইঞ্জ করি।
১২ টি প্রশ্ন থেকে ১০ টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে।১০ টি প্রশ্ন কি সরাসরি কমন পড়বে.???কোনদিনই না।কিন্তু এই কমন না পড়া ৩-৪ টি প্রশ্ন কি আকাশ থেকে আসে??
সেটাও না।

৪০ বিসিএস এ একটি প্রশ্ন এসেছিল।
জনকূটনীতি কি?পররাষ্ট্রনীতিতে জনকূটনীতির গুরুত্ব। এই প্রশ্নটা প্রশ্নকর্তা কি বানিয়েছেন??বা কোন বই থেকে দিয়েছেন??উত্তর হলো না।

প্রশ্নটা করা হয়েছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কনটেক্সটে।২০১৯ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে জনকূটনীতি কথাটা খুব আলোচিত হয়েছিল।ড. মোমেন দায়িত্ব নেওয়ার পর বলেছিলেন তিনি অর্থনৈতিক কূটনীতিক ও জনকূটনীতি উপর জোর দিবেন।

তাহলে এই টার্মটা কি আউট অফ দা বক্স?? কোনভাবেই না।২০২০ এর জানুয়ারিতে ৪০ বিসিএস লিখিত প্রশ্নে তাই এটা সঙ্গত কারনেই ছিল।

৪১ বিসিএসে আসা ইসলামফোবিয়া কি? এটা ওই মুহূর্তে আলোচিত একটা ইস্যু ছিল আমেরিকা/ইউরোপ/ভারতের বিভিন্ন হেইট স্পিচের ঘটনায়।তাই কনসেপচুয়াল ইস্যু নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নাই।বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক চলমান ইস্যুগুলো নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলেই প্রশ্ন উত্তর করে আসতে পারবেন।

★ তবে হ্যা ১২ টার ১/২ টা একদম আউট অফ দা বক্স আসবে।ওই দুইটা স্কিপ করেই ১০ টা আন্সার করুন।শ্যাডো পেনডেমিক,anarchial society এগুলা হাজার বই থেকে পড়লেও পাবেন না।পরীক্ষার হলে ইন্সটেন্ট মনেও আসবে না।৫-৬ টা এমনিতেই কমন পড়বে।বাকিগুলো আপনার ধারনা/এনালাইসিস করেই লিখতে হবে।

★ইম্পিরিকাল ইস্যুর প্রশ্নগুলোর উত্তর করার সময় কনফ্লিক্ট এর প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে সলিউশন পর্যন্ত ম্যাপ,ডাটা,কোটেশান ব্যবহার করে সাজিয়ে লিখবেন।ম্যাপ আকার সময় অবশ্যই যতটুকু সম্ভব একুরেসি বজায় রাখতে হবে।এই পার্টে চেষ্টা করলেই ভাল নাম্বার পাওয়া সম্ভব।

★প্রবলেম সলভিং এর জন্য প্রচলিত ফরমেটগুলো দেখে যাবেন।ফরমেট থেকে আপনার এনালাইসিস এর উপর এক্সামিনার বেশি মনযোগ দিবেন।তাই ফরমেট নিয়ে না ভেবে ইস্যুগুলোর বেসিক কনসেপ্ট ক্লিয়ার করুন আগে।

গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতাঃ

★ এখানে ৫০ নাম্বার ফুল পাওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড সাইন্স নাকি আর্টস সেটা নিয়ে না ভেবে বিগত প্রশ্ন এনালাইসিস করে আগে কোন কোন চাপ্টার থেকে ম্যাথ আসতে পারে তা ঠিক করুন।

★বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীর সমস্যা হয় বিন্যাস,সমাবেশ,স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, সম্ভাব্যতায়।তাই এই চাপ্টারগুলোর বেসিক ক্লিয়ার করে যাবেন।ম্যাথ করার সময় নিয়ম শিখবেন,চেষ্টা করবেন সবগুলো নিয়মের ম্যাথ প্র‍্যাক্টিস করে যেতে।তাহলেই প্রশ্ন কমন পড়বে।

★উপপাদ্য প্রস্তুতি না নিয়ে গেলে ভুল করবেন।কারণ কোন ম্যাথ কমন না পড়লে বিকল্প হিসেবে উপপাদ্যই আপনার ভরসা হয়ে উঠবে।

★সূচক-লগারিদম,ভেনচিত্র,ত্রিকোণমিতি,সেট,সমান্তর ও গুনোত্তর ধারা,নির্নায়ক,লাভ ক্ষতি,শতকরা এসব টপিক থেকেই সাধারণত বেশি প্রশ্ন আসে।পাটিগণিত ও বীজগণিতের উপর তার জোর দিতে হবে।

★মানসিক দক্ষতার জন্য বিশেষ কোন সাজেশান নেই। বাজারে প্রচলিত যেকোন বই থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকুন।ওয়েবসাইট গুলোও সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

বিজ্ঞান

★১.৫ নাম্বারের প্রশ্নেও তিনটি ভাগ থাকে এখন।তাই সবার আগে নিশ্চিত করুন প্রশ্নের উত্তর করার সময় আপনি পার্টিশন বজায় রেখেছেন কিনা।

★সাধারণ বিজ্ঞান পার্টে বর্তমানে বেসিক থেকে প্রশ্ন করা হয়।২-৩ লাইনেই অনেক প্রশ্নের উত্তর হয়ে যায়। তাই নিশ্চিত করবেন অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর কোন কিছু না লিখতে।

★আলো,শব্দ,এসিড-ক্ষার,পানি,পলিমার,খাদ্য ও পুষ্টি,বায়োটেকনোলজি, রোগ ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা এই চাপ্টারগুলো থেকে বেশি প্রশ্ন আসে।তাই নবম-দশম শ্রেণীর পদার্থ,রসায়ন, ও সাধারণ বিজ্ঞান বই থেকে প্রতিটি চাপ্টারের বেসিক ক্লিয়ার করুন।

★আমাদের সম্পদ, বায়ুমন্ডল চাপ্টার দুইটি অনেকেই গুরুত্ব দেয় না।কিন্তু প্রশ্ন আসতেই পারে।তাই কোন চাপ্টার বাদ দিয়ে প্রস্তুতি নিবেন না।

★একটি প্রশ্নের বিভিন্ন অংশ ভিন্ন চাপ্টার থেকে মিলিয়ে করতে পারে।তাই সব চাপ্টার পড়ার কোন বিকল্প নাই।

★কম্পিউটার এর জন্য ইন্টারের আইসিটি বইটি পড়ার চেষ্টা করবেন।

★কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকস পার্ট খাতায় নোট করে পড়বেন।যে কোন প্রচলিত গাইড বই ফলো করতে পারেন।

★বিজ্ঞানে যাদের দুর্বলতা আছে তারা পরীক্ষার আগে বার বার বিজ্ঞান রিভিশান দিবেন।নোট করে পড়লে পরীক্ষার আগে রিভিশান দিতে সুবিধা হবে।

আজকে এই পর্যন্তই।পরবর্তীতে প্রতিটি বিষয়ের উপর আলাদাভাবে লিখবো ইনশাআল্লাহ।