বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র-মালিকানাধীন একটি স্বশাসিত কর্পোরেশন। এটি কিছু জাহাজ ও তেলবাহী টেঙ্কার, এবং আরো সমুদ্রগামী জাহাজকেও সনদ প্রদান করে। বাংলাদেশ এবং বর্হিবিশ্বের মাঝে খাদ্যশস্য, জ্বালানি, ভোজ্য তেল, পোশাক, প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য, চা, চামড়া, রাসায়নিক দ্রব্যসহ কনটেইনারজাত যে কোন মালামাল আমদানি ও রপ্তানি করে থাকে।
এই শিপিং কর্পোরেশনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশবলে ৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২-এ এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।[১][২] শিপিং কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠার পরপরই বাংলার দূত এবং বাংলার সম্পদ নামের দুটো সমুদ্রগামী জাহাজ বিএসসিতে সংযোজিত হয়। তারপর থেকে বিএসসি এ যাবত সর্বমোট ৩৮টি জাহাজ সংগ্রহ করে। তবে জাহাজের স্বাভাবিক বয়সজনিত কারণে এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে ২৫টি জাহাজ বিক্রি বা স্ক্র্যাপ করা হয়। বর্তমানে ১৩টি জাহাজের মিশ্র বহর নিয়ে বিএসসি সমুদ্রপথে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে
বিএসসির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে অবস্থিত। এছাড়া ঢাকা ও খুলনায় দুটি সাব অফিস রয়েছে। বিএসসির সব অফিসেই বাণিজ্য এবং জাহাজ চার্টার বা ভাড়া সংক্রান্ত দুটি বিভাগ রয়েছে। বহির্বিশ্বে মালামাল আনা-নেয়ার সুবিধার্থে সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে দুটি আঞ্চলিক অফিস খোলা হয়েছে।
জাহাজ মেরামত সংক্রান্ত কর্মকান্ড জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত বিভাগ তথা প্রযুক্তি শাখা দেখাশোনা করে এবং জাহাজ ভাড়া, গণযোগাযোগ ও কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপার বাণিজ্য ও চার্টার বিভাগ তত্ত্বাবধান করে। সাত সদস্যের একটি পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে বিএসসি পরিচালিত হয়।
নৌপরিবহণ মন্ত্রী পদাধিকার বলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান।[১][১]বিএসসি একটি সরকারি দেশীয় প্রতিষ্ঠান হলেও এর কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হওয়ায় একে জাতীয় মেরিটাইম আইন মেনে চলার পাশাপাশি অধীনস্থ জাহাজসমূহকে সকল আন্তর্জাতিক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশের মেরিটাইম আইন অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়। মেরিটাইম আইনসমূহের মূল উদ্দেশ্য হলো জীবন ও সম্পদের অধিকতর নিরাপত্তা বিধান এবং সমুদ্রে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা। যা কিনা আইএমও-এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়ে থাকে।
বিএসসি’র জাহাজ সমূহে ইন্টারন্যাশনাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট (কোড এবং ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (কোড চালু রয়েছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি অর্থাৎ জার্মানিশেয়ার লয়েডের সনদায়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১১ সাল নাগাদ প্রতিটি জাহাজে একটি লং রেঞ্জ আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ট্রাকিং সিস্টেম (ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক আইন ও ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে বিএসসিকে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ লগ্নি করতে হয়।